কোন বিষয়ে কত নম্বর চাই উচ্চমাধ্যমিকে নতুন বিষয় নির্বাচনের জন্য? বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল শিক্ষা সংসদ।সংসদের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সংসদ অনুমোদিত যে ১৬১১টি প্রতিষ্ঠানে নতুন বৃত্তিমূলক বিষয়গুলি পড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সেমিস্টার ব্যবস্থা চালু হচ্ছে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই। একই সঙ্গে কৃত্রিম মেধা সহ নানান বিষয় সিলেবাসে যুক্ত করা হচ্ছে জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে। পাশাপাশি বৃত্তিমূলক পাঠক্রমেও যোগ করা হচ্ছে বেশ কয়েকটি নতুন বিষয় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ অনুমোদিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা সংসদ এ বিষয়ে আগেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। আবারো বৃহস্পতিবার অর্থাৎ মাধ্যমিকের ফলাফলের দিন এই সম্পর্কিত চারটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন শিক্ষা সংসদ। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে মাধ্যমিকে বেশ কিছু বিষয়ে নূন্যতম কত নম্বর পেলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নির্বাচন করা যাবে বিভিন্ন ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’। তবে মাধ্যমিকের ফল ঘোষণার পর এই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় রাজ্যের স্কুলগুলি বিপাকে পড়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাষা ছাড়া মোট তিনটি সেট থেকে ঐচ্ছিক বিষয় নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া হবে ছাত্রছাত্রীদের। সেই তিনটি সেটের মধ্যে প্রথম সেটে থাকবে ফিজিক্স অথবা নিউট্রিশন , রসায়ন অথবা ভূগোল ,অর্থনীতি অথবা নৃতত্ত্ব অথবা সাইন্স অফ ওয়েল বিয়িং এর মত নানান সাবজেক্ট কম্বিনেশন। অ্যাকাউন্টেন্সি ,বিজনেস স্টাডিজ ,অর্থনীতি অথবা সায়েন্স অফ ওয়েল বিয়িং অথবা অ্যাপ্লাইড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির মতো বিষয় থাকবে দ্বিতীয় সেটের সাবজেক্ট কম্বিনেশনে। পলিটিক্যাল সাইন্স অথবা বায়োলজিক্যাল সাইন্স ,এডুকেশন অথবা নিউট্রিশন এর মত বিষয় থাকবে তৃতীয় সেটের সাবজেক্ট কম্বিনেশনে।
প্রথম সেট | ফিজিক্স অথবা নিউট্রিশন , রসায়ন অথবা ভূগোল ,অর্থনীতি অথবা নৃতত্ত্ব অথবা সাইন্স অফ ওয়েল বিয়িং |
দ্বিতীয় সেট | অ্যাকাউন্টেন্সি ,বিজনেস স্টাডিজ ,অর্থনীতি অথবা সায়েন্স অফ ওয়েল বিয়িং অথবা অ্যাপ্লাইড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি |
তৃতীয় সেট | এডুকেশন অথবা নিউট্রিশন |
তবে এক্ষেত্রে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জীবন বিজ্ঞানের নূন্যতম ৩৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে যদি কোন পডুয়া একাদশ-দ্বাদশে বায়োলজিক্যাল সাইন্স নিয়ে পড়তে চাই।
একইভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংকে ন্যূনতম ৩৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে যদি কোন পড়ুয়া কস্টিং এন্ড ট্যাক্সেশন, একাউন্টান্সি ,সাইবার সিকিউরিটি ,ডেটা সায়েন্স ,আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ,কম্পিউটার সায়েন্স , স্ট্যাটিসটিক্স এবং অংক নিয়ে পড়তে চাই। অপরদিকে ভূগোলেও নূন্যতম ৩৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে যদি কোন পড়ুয়া তার সাবজেক্ট কম্বিনেশনে ভূগোল রাখতে চায়।
এই প্রসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সেক্রেটারি প্রিয়দর্শনী মল্লিকের বক্তব্য- “উচ্চ মাধ্যমিকে কিছু কিছু বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অঙ্ক বা অন্যান্য বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। যাতে পড়াশোনার নূন্যতম গুণমান বজায় থাকে।এর ফলে পড়ুয়ারা ভবিষ্যতের জন্য যেমন কর্মদক্ষ্য হবে তেমনি তারা আগেভাগে সে বিষয়ে সম্পর্কে একটা নূন্যতম ধারণার তৈরি করতে পারবে। এই ইন্টারডিসিপ্লিনারি ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’ তৈরি করা হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি মেনেই। যেন কোন শিক্ষার্থী অংকের পাশাপাশি সংস্কৃত অথবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাশাপাশি জীববিদ্যার মতো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। সেই জন্যই তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন সেট। সাথে সাথে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে রাখা হয়েছে ‘অ্যামালগামেটেড’ বিষয়ও। যাতে পড়ুয়াদের কাছে বিভিন্ন জটিল বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপন করা যায়। উদাহরণস্বরূপ হিসেবে অ্যাপ্লাইড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির কথা বলা যেতে পারে। স্কুলগুলির সব সময় যোগাযোগ রয়েছে এ সংসদের সঙ্গে। এই বিষয়গুলি যেহেতু বর্তমানে স্কুলে নিযুক্ত শিক্ষকরাই পড়াতে পারবেন তাই ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও কোন অসুবিধা হবে না।”
তবে এ প্রসঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস। তিনি জানিয়েছেন- “সংসদের সিদ্ধান্তে দেরির জন্য স্কুলগুলি শুধু অপ্রস্তুতই নয়, পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও বিরক্ত। এই সমস্ত সিদ্ধান্ত এবং সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি অনেক আগেই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা উচিত ছিল সংসদের।”
সংসদের পক্ষ থেকে এই নতুন সাবজেক্ট কম্বিনেশন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল এপ্রিলেই। তবে সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়নি প্রতি সেটে কোন কোন বিষয় থাকছে বা কোন কোন বিষয়ের নির্বাচনের জন্য মাধ্যমিকে কত নম্বর পেতে হবে। এদিকে বেশ কিছু স্কুলের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে মাধ্যমিকের প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই। ভর্তির জন্য স্কুলগুলির লিফলেটও ছাপানো সম্পন্ন হয়েছে আগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী। ফলে জটিলতা তৈরি হয়েছে নতুন বিজ্ঞপ্তি ঘিরে।
এদিন একই সুর শোনা গেল বঙ্গীয় শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মন্ডল এর গলায়। তার জানান -এ বছর অনেক মৌলিক পরিবর্তন এনেছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। এর মধ্যে অন্যতম হল ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’। এর মধ্যে আমরা লক্ষ্য করলাম, সরকারের লোকদেখানো বিকল্প শিক্ষানীতিকে পাশে সরিয়ে রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষানীতিকে অনুসরণ করা হয়েছে। এতে ছাত্রছাত্রীদের কতটা লাভ হবে, সেটা সময় বলতে পারবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন্দ্রের নীতিকে এ ভাবে অনুকরণ করা হচ্ছে কেন? সরকার কেন্দ্রের শিক্ষা নীতি মানবে না বলেই তো বিকল্প শিক্ষা নীতি তৈরি করেছিল। তা হলে এই দ্বিমুখী নীতি কেন?”
একই মত পোষণ করেছেন যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্যও। তিনি বলেন – “বিজ্ঞপ্তিটা আগে দিলে হয়তো অসুবিধে কম হত। কিন্তু যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থেই নিয়েছে শিক্ষা সংসদ।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা সংসদ একটি বিজ্ঞপ্তিতে ১৬১১ টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেছেন যেগুলিতে নতুন বৃত্তিমূলক বিষয়গুলি পড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে ।